প্রচ্ছদ » অন্যান্য » বাংলাদেশের জরুরী সেবা ৯৯৯ ন্যাশনাল ইমার্জেন্সি সার্ভিস সম্পর্কে জানেন কি ?
বাংলাদেশের জরুরী সেবা ৯৯৯ ন্যাশনাল ইমার্জেন্সি সার্ভিস সম্পর্কে জানেন কি ?
যুগের সাথে তাল মিলিয়ে বাংলাদেশ এখন জাতিসংঘ কতৃর্ক উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে স্বীকৃত। উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে বাংলাদেশের উত্তরণ জাতির জন্যে এক বিরাট অর্জন। তারই ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশ সরকার বাংলাদেশের সকল স্তরের জনগনকে নাগরিক সুবিধা দিতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
আমরা সবাই জানি যে, উন্নত দেশ গুলোতে অনেক আগে থেকেই ন্যাশনাল ইমার্জেন্সি সার্ভিস ব্যবস্থা চালু ছিল। সেই দিক থেকে বাংলাদেশ অনেকটাই পিছিয়ে। তাই এই প্রথম ২০১৮ সালে বাংলাদেশে ৯৯৯ ন্যাশনাল ইমার্জেন্সি সার্ভিস চালু করা হয়েছে।
চলুন দেখে নেই ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স, বাংলাদেশ পুলিশের সঙ্গে অংশীদারির ভিত্তিতে পরিচালিত ৯৯৯ ন্যাশনাল ইমার্জেন্সি সার্ভিস এর সকল তথ্য ও সার্ভিস সম্পর্কে –
- যে কোনো মোবাইল নম্বর থেকে ৯৯৯ নম্বরে ফোন দিতে পারবেন কিন্তু ল্যান্ডলাইন থেকে নয়।
- বিপদের সময় সবচাইতে দ্রুত কার্যকরী একটি নির্দিস্ট সম্পূর্ণ টোল ফ্রি ফোন নাম্বার।
- দিন রাত ২৪ ঘন্টা ইমারজেন্সি সার্ভিস।
- সারা বাংলাদেশ জুড়ে সার্ভিস পাওয়া যাবে।
- ফায়ার সার্ভিস সাপোর্ট।
- পুলিশ নিরাপত্তা সাপোর্ট।
- দ্রুত এ্যাম্বুলেন্স সাপোর্ট সহ আরো অনেক সার্ভিস।
গত ফেব্রুয়ারি ২০১৮তে ৯৯৯ হেল্প ডেস্ক নম্বরে ফোন করেন জনাব আনিসুর রহমান, তিনি দেশের বাইরে থেকে পরিবারের জন্য ৪ পেকেট চকলেট নিয়ে আসেন। যখন তিনি ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ইমিগ্রেশন পার হচ্ছেন তখন কাস্টম পুলিশ তাকে হয়রানি করে ও ১পেকেট চকলেট রেখেদেন। তিনি কোন উপায় না পেয়ে তাৎক্ষণিক সহযোগিতা চান ন্যাশনাল ইমার্জেন্সি সার্ভিসে।
কল সেন্টার এজেন্ট ফোনটি পেয়ে সংশ্লিষ্ট ডির্পামেন্টে ট্রান্সফার করেন। কর্মকর্তারা সংঙ্গে সংঙ্গেই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেন। যখন তিনি ইমিগ্রেশনের বাহিরে চলে আসেন। ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষ জনাব আনিসুর রহমান সাহেবর নাম মাইকে ঘোষনা করে খুজে বের করে চকলেটর পেকেট ফেরত দেন।
জরুরি মুহূর্তে ৯৯৯ এর মাধ্যমে সেবা পেয়ে সন্তুষ্ট জানিয়ে জনাব আনিসুর রহমান বলেন, ‘বাংলাদেশে এমন একটি সেবা পাওয়া যাবে এটা ভাবতেই অবাক লাগছিল। মাত্র আধঘণ্টার মধ্যে কর্তৃপক্ষ আমার সমস্যা সমাধান করেন। এজন্য কোনো টাকা-পয়সা খরচ হয়নি।’
তাৎক্ষণিক ৯৯৯ জরুরি সেবা পেতে আপনাকে কি করতে হবে-
নিদিষ্ট ঠিকানা প্রদানঃ
- জেলা বা উপজেলার নাম উল্লেখ করুন।
- রাস্তা বা বাড়ির নাম উল্লেখ করুন।
- সঠিক অবস্থান জানা না থাকলে পার্শ্ববর্তী কোন নির্দিষ্ট স্থানের নাম উল্লেখ করুন।
প্রশ্নের সঠিক উত্তর প্রদানঃ
- কলের সময় শান্ত থাকুন।
- ৯৯৯ এ- কল করার পর আপনি কোন ধরনের সেবা (পুলিশ, ফায়ার সার্ভিস, অ্যাম্বুলেন্স) চাচ্ছেন তা বলুন।
- আপনার সমস্যা, বিশদভাবে আপনার ঘটনার বর্ণনা বিস্তারিত তুলে ধরুন।
- সেবা প্রদানকারী কর্তৃপক্ষকের প্রশ্নের সঠিক উত্তর প্রদান।
সতর্কতা ও ধিরস্থির ভাবে জরুরি পরিস্থিতির তথ্য প্রদানঃ
- আপনি নিজে নাকি অন্য কেউ সমস্যায় পড়েছেন?
- কেউ আহত হলে তার পরিস্থিতি পরিষ্কারভাবে বলার চেষ্টা করুন।
- আপনার কোন ধরনের জরুরি সেবা প্রয়োজন – অ্যাম্বুলেন্স? পুলিশ? নাকি অন্য জরুরি সেবা?
- আহত ব্যক্তির অবস্থা কততুকু খারাপ?
- তার চেতনা আছে কি?
- তিনি কি শ্বাস নিতে পারছেন?
- তার আম্বুলান্সের দরকার আছে কিনা?
- কল না কেটে লাইনে থাকুন।
অ্যাম্বুলেন্স সেবা চাইতে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় গুলো মনে রাখুন-
- ৯৯৯ সার্ভিসের মাধ্যমে যে অ্যাম্বুলেন্স সেবা প্রদান করা হয়।
- আপনাকে এর জন্য টাকা প্রদান করতে হবে। বাংলাদেশের কোনো হাসপাতাল বিনামূল্যে অ্যাম্বুলেন্স সার্ভিস প্রদান করে না।
- ৯৯৯ এর কাজ হল বিভিন্ন অ্যাম্বুলেন্স সার্ভিস প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যোগাযোগ করিয়ে দেয়া।
- অ্যাম্বুলেন্সের ধরণ, গন্তব্যস্থল ইত্যাদি অনুযায়ী ভাড়ার পরিমাণ নির্ধারিত হয়।
- অ্যাম্বুলেন্স সেবা চাইতে অপারেটরকে সঠিক তথ্য প্রদান করুন।
- ৯৯৯ সার্ভিস থেকে লাশবাহী অ্যাম্বুলেন্স সেবা প্রদান করা হয় না।
ফায়ার সার্ভিস কি কি সেবা প্রদান করে এবং এই সার্ভিসের সেবা চাইতে ৯৯৯ নম্বরে ফোন করুন।
- ফোন করে প্রথমে আপনার নাম বলুন।
- সাহায্য প্রার্থীর সঠিক লোকেশন বা ঠিকানা জানান।
- অগ্নিকাণ্ড নিয়নত্রন।
- সড়ক ও নৌ দুর্ঘটনা উদ্ধার।
- আটকে পড়া মানুষ উদ্ধার।
- পশু, পাখি উদ্ধার ইত্যাদি।
পুলিশের সেবা চাইতে এই বিষয়টি মনে রাখুন-
- ৯৯৯ অপারেটর আপনাকে নিকটস্থ থানার সঙ্গে যোগাযোগ করিয়ে দেবে।
- আপনি সেখানে আপনার অভিযোগটি জানান।
- পুলিশি সাহায্যের ক্ষেত্রে অধিকাংশ সময়ই নিকটস্থ থানায় গিয়ে অভিযোগ করতে হয়।
- কারণ লিখিত অভিযোগ ছাড়া অনেকে ক্ষেত্রে পুলিশ তদন্ত শুরু করতে পারে না।
- ৯৯৯ এর মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট থানার কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে আপনার করণীয় সম্পর্কে জেনে নিন।
- আপনার মোবাইল ফোন নম্বরটি খোলা রাখুন, যাতে অপারেটর যেকোন মুহূর্তে আপনার সঙ্গে পুনরায় যোগাযোগ করতে পারে।
- এর বাইরে পুলিশ, ফায়ার সার্ভিস বা অ্যাম্বুলেন্স কর্তৃপক্ষও আপনার সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেন।
৯৯৯ ইমারজেন্সি সার্ভিস থেকে আমি কি কি সুবিধা পেতে পারি?
- যেকোন ধরণের ছিনতাই, অপহরণ কিংবা এইরকম সকল ধরণের ক্ষতির আশংকা থাকলে অথবা পরিস্থিতির মাঝে পরে গেলে সাথে সাথে ফোন করুন ৯৯৯ এবং অবস্থান জানিয়ে নিরাপত্তার জন্য সহযোগিতা পেতে পারেন পুলিশের মাধ্যমে।
- আপনার যদি খুব ইমারজেন্সি এ্যাম্বুলেন্স এর প্রয়োজন পরে এবং দ্রুত এ্যাম্বুলেন্স না পান তাহলে পেতে পারেন এ্যাম্বুলেন্স। তবে এক্ষেত্রে এ্যাম্বুলেন্স চার্জ কিন্তু আপনাকেই দিতে হবে।
- কোথাও আগুন লাগলে কল করতে পারেন ৯৯৯ এ এবং পেতে পারেন ইমারজেন্সি ফায়ারসার্ভিস সাপোর্ট।
গুরুত্বপূর্ণ তথ্যঃ
- মনে রাখবেন ভুল তথ্য প্রদান এবং অযথা কোন কারনে ফোন দিয়ে বিরক্ত করবেন না।
- আপনার বিরুদ্ধে নেয়া হতে পারে আইনি ব্যবস্থা।
- সবসময় প্রয়োজনে ফোন করুন।
- অযথা কোন তথ্য প্রদান থেকেও বিরত থাকুন।
- কল করার পর সঠিক তথ্য দিন।
- বিপদ থেকে বাঁচতে চেস্টা করুন।
- এখন থেকে যেকোন ইমারজেন্সি সাপোর্ট এর জন্য ৯৯৯ এ কল করুন।
Total Page Visits: 2148 - Today Page Visits: 1