বিডিসি নিউজ৭১ প্রতিনিধি রাসেল ::: বিশ্বজুড়েই শিশুরা নানা ধরনের সহিংসতার শিকার হয়। যৌন হয়রানি, সহিংস আক্রমণ, শারীরিক শাস্তি, মানসিক নির্যাতন ও অবহেলা-এর যে কোনোটা ঘটতে পারে তার সঙ্গে। বাংলাদেশেও শিশুরা এমন অনাচারের শিকার হয়- ব্যক্তিগত বা সরকারি অফিসে, বাড়িতে, স্কুলে, রাস্তায়, কর্মস্থলে ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে তাদের সঙ্গে এমন আচরণ করা হয়ে থাকে। শিশুর প্রতি সুরক্ষা আইন এখনও পুরোপুরি বাস্তবায়ন হয়নি। শিশুদের জন্য যেসব সেবার ব্যবস্থা করা হয়েছে সেগুলোতে মান ও সমতার ঘাটতি রয়ে গেছে। শিশুর সুরক্ষায় যেসব প্রতিষ্ঠানের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখার কথা সেগুলোতেও পর্যাপ্ত লোকবল ও অর্থ বরাদ্দ হয় না। বাংলাদেশে শিশুদের এখনও দেখা হয় রক্ষণশীল সামাজিক রীতি ও দৃষ্টিভঙ্গিতে, যাতে গুরুতর অধিকার লংঘনের ঘটনা ঘটতে পারে। সহিংসতা, যৌন নিপীড়ন, শিশু শ্রম, বাল্যবিয়ে এবং মানসিকভাবে হয়রানি এখনও অহরহই ঘটছে। শিশুর প্রতি সহিংসতার ক্ষেত্রে দারিদ্র্য একটি বড় ভূমিকা রাখে। যৌন নির্যাতনের ঘটনাগুলো ধরাটা বেশ কঠিন। সামাজিক সংস্কার আর প্রভাবশালীদের চক্ষুশূল হওয়ার ভয়ে এমন অপরাধও চাপা পড়ে যায়। অধিকাংশ বাবা-মা আইন ও শিশুর সুরক্ষা সেবাগুলো সম্পর্কে ভালো ধারণা নেই। বাংলাদেশে নারী ও শিশু নির্যাতনের বিরুদ্ধে আইন আছে। তবে তা যৌন হয়রানির ঘটনাকে আমলে নেয় না। অথচ যৌন হয়রানির প্রবণতা ক্রমেই বেড়ে চলেছে। অনেক ক্ষেত্রে কিশোরীরা আত্মহত্যা করে অথবা আরও সহিংসতার শিকার হয়। প্রতিবন্ধী শিশুদের নিপীড়নের বিষয়ে তেমন পরিসংখ্যান না থাকলেও যতটুকু তথ্য পাওয়া যায় তাতে এটা স্পষ্ট যে, প্রতিবন্ধী মেয়েদের ওপর যৌন সহিংসতা ক্রমশ বাড়ছে। খুব ছোট শিশুদের বিপজ্জনক কাজে লাগানো হচ্ছে। ১৭ লাখ শিশু, যাদের বেশিরভাগই ছেলে, তারা শিশু শ্রম দিচ্ছে। অনেক মেয়েই ঘরকন্নার কাজে জড়িত থাকে। কিশোরী মেয়েরা অনেক সময়ই ঘরে সহিংসতার পাশাপাশি যৌন হয়রানির শিকার হয়। তারা এক ধরনের গৃহ দাসত্বের কবলে পড়ে। বলাই বাহুল্য, এরা শিক্ষা থেকেও বঞ্চিত। এদিকে ১৫ বছরের কম বয়সী মেয়েদের বিয়ের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ বিশ্বের প্রথম স্থানে রয়েছে। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে সৃষ্ট প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণেও এই বয়সের মেয়েদের বাল্যবিয়ে ও মানবপাচারকারীদের কবলে পড়ার ঝুঁকি তৈরি হচ্ছে। অনেক বিবাহিতা কিশোরী শারীরিক ও যৌন সহিংসতার শিকার হয়। এই বয়সী মেয়েদের ৩৩ শতাংশ মনে করে, স্বামীর তাদেরকে মারধরের অধিকার আছে। কর্মসংস্থানের অভাবে অনেক কিশোর-কিশোরী অনিরাপদ মাইগ্রেশনের দিকে ঝুঁকছে। এই শিশুরা পদে পদে নিরাপত্তা নিয়ে সমস্যার মুখোমুখি হতে থাকে। এ সকল সহিংসতা বন্ধে মনিটরিং সেল গঠনের লক্ষে চুয়াডাঙ্গা আত্মবিশ্বাস এনজিও এর সভাকক্ষে চুয়াডাঙ্গা সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের নিয়ে এক সভার আয়োজন করা হয়। সভায় আত্মবিশ্বাসের পক্ষ থেকে স্বাগত বক্তব্য রাখেন আত্মবিশ্বাস প্রতিষ্ঠানের নির্বাহী পরিচালক মো: আকরামুল হক বিশ্বাস, প্রধান অথিতি হিসেবে বক্তব্য রাখেন উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার বিকাশ কুমার সাহা, বিশেষ অথিতি হিসেবে বক্তব্য উপজেলা পরিষদ মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান শাহজাদী মিলি ও চুয়াডাঙ্গা সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের সিনিয়র শিক্ষক মো: আজিজুর রহমান এবং সবশেষে সভার সভাপতি হিসেবে সমাপণী বক্তব্য রাখেন চুয়াডাঙ্গা সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ (অব:) অধ্যাপক মো: সিদ্দিকুর রহমান এছাড়াও সভায় উপস্থিত ছিলেন আত্মবিশ্বাসের বিভিন্ন স্তরের কর্মকর্তা ও কর্মচারীবৃন্দ। সভা শেষে চুয়াডাঙ্গা সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদেরকে নিয়ে একটি মনিটরিং সেল গঠন করা হয়। উক্ত গঠিত মনিটরিং সেল এ সর্বসম্মতিক্রমে উপদেষ্টা হিসেবে মনোনীত করা হয় সিনিয়র শিক্ষক মো: আজিজুর রহমানকে, আহ্ববায়ক মনোনীত করা হয় শিক্ষার্থী মোছা: কানিজ ফাতেমাকে, সদস্য হিসেবে মনোনীত করা হয় শিক্ষার্থী মোছা: আয়েশা নুর ও মোছা: মারজিয়া রুশনিতাকে এবং সদস্য সচিব হিসেবে মনোনীত করা হয় শিক্ষার্থী মোছা: তাসনিম তারানুম ইয়ামিনকে।