নিজস্ব প্রতিবেদক: চুয়াডাঙ্গার হায়দারপুরে নবগঙ্গা দখলকে কেন্দ্র করে নবগঙ্গা খাল পাড়ের দুই জমির মালিকের মধ্যে বিরোধের জেরে দুই পক্ষের সংর্ঘষে গুরুত্বর জখম মধু মালিথার মৃত্যু হয়েছে। গত রোববার সকাল ১০ টার দিকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধিন অবস্থায় মৃত্যু হয় তার। মধুর মৃত্যুর খবরে এলাকাবাসির মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। স্থানীয় জনপ্রতিনিধীরা বলছেন শলকের ভাড়া করা লোকজন পরিকল্পিত ভাবে খুন করেছে মধুকে। মধুর বড় ভাই মিজানুরের করা মামলার এজহারভুক্ত মোট ৬ জনকে আটক করেছে পুলিশ। মামলার প্রধান আসামী শলক ও দ্বিতীয় আসামী খালিদ পলাতক। গতকাল রাতেই হায়দারপুর গ্রাম্য কবরস্থানে নিহতের দাফন সম্পন্ন।
জানা যায়, চুয়াডাঙ্গার হায়দারপুরে নবগঙ্গা খননকে কেন্দ্র করে নবগঙ্গা খাল পাড়ের দুই জমির মালিক হায়দারপুর গোপালনগর বুচকলা পাড়ার আওলাদ মালিথার ছেলে শলকের সাথে মধু শালিথার পরিবারের মধ্যে বিরোধের চলে আসছিলো। শুক্রবার সকালে মধু মালিথা ও তার পক্ষের লোকজন খনন কাজের স্থানে গেলে বেলা ১১ টার দিকে পূর্ব থেকে পরিকল্পনা অনুযায়ী শলকের ভাড়া করা ৫০ জনের অধিক লোকজন মধু মলিথা ও তার পক্ষের লোকজনের উপর ধারালো অস্ত্র দিয়ে আক্রমণ করে। এ সময় শরীরের বিভিন্ন স্থানে কোপ লেগে গুরুত্বর জখম হয় মধু মালিথা ও তাঁর ছোট ভাই জধু মালিথাসহ স্থানীয় আরো এক জন। গুরুত্বর জখম অবস্থায় তাঁদেরকে উদ্ধার করে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে নিলে হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসক অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় মধু মালিথা ও তাঁর ছোট ভাই জধু মালিথাকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার্ড করেন। ঘাড়সহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে গুরুত্বর জখম নিয়ে রাজশাহীতে জধু মালিথা চিকিৎসাধিন থাকলেও গতকাল সকাল ১০ টার দিকে মৃত্যু হয় মধু মালিথার।
এ বিষয়ে মধু মালিথার চাচাতো ভাই মোয়াজ্জেম হোসেন জানান, একই স্থানে আমারও চার বিঘা জমি আছে। প্রায় ৩০ বছর পূর্বে আমার পিতা এ ধানি জমি ক্রয় করেন। এখন এখানে নবগঙ্গা নদীর খনন কাজ চলছে। সরকারী কাজে আমরা বাঁধা দিতে চাইনা। তবে শলক তাঁর পুকুর বাচাতে খনন কাজের দ্বায়িত্বে থাকা ম্যানেজার নাঈম ও শান্তকে টাকা খাইয়ে খনন কাজ আমাদের জমির দিকে মোড় ঘুড়িয়ে দিয়েছে। এরই প্রতিবাদ করলে শুক্রবার শলক ৫০ জনের অধিক ভাড়া করা লোকজন নিয়ে আমাদের উপর আক্রমন করে। এ সময় ধারালো অস্ত্রের কোপে আমার চাচাতো ভাই মধু মালিথা ও জধু মালিথা গুরুত্বর জখম হয়। খবর পেয়ে পুলিশ এসে তাঁদেরকে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে নিয়ে যায়। কিন্তু মধু ও জধুর অবস্থা অশঙ্কাজনক হওয়ায় তাদেরকে রাজশাহী রেফার্ড করে। রাজশাহী হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হয় মধুর।
এ বিষয়ে চুয়াডাঙ্গা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবু জিহাদ ফকরুল আলম খান বলেন, এ ঘটনায় নিহতের বড় ভাই শুক্রবার ১৬ জনকে আসামী করে এবং ৩০/৩৫ অজ্ঞাতনামা করে মামলা দায়ের করেছে। যেহেতু ভিকটিমের একজনের চিকিৎসাধিন অবস্থায় মৃত্যু হয়েছে সে কারণে পূর্বের মামলার সাথে মৃত্যু ঘটনা সংযোজন করা হবে। রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে নিহতের লাশের ময়না তদন্ত সম্পন্ন হয়েছে। ময়না তদন্ত রিপোর্ট অনুযায়ী পরবর্তী আইনগত ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে। এ ঘটনায় আজ আরো দুইজনকে আটক করা হয়েছে।
এদিকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে নিহত মধু মালিথার ময়না তদন্ত শেষে গতকাল সন্ধা সাড়ে সাতটায় মধুর মরদেহ হায়দারপুর মালিথাপাড়া হাক্কানি জামে মসজিদ প্রাঙ্গনে এসে পৌছায়। এ সময় মরদেহ দেখতে সেখানে ভীড় জমান গ্রামবাসী। গতকাল রাত সাড়ে ৯টায় নিহতের জানাজা শেষে দাফন সম্পন্ন করা হয়।