বিডিসি নিউজ৭১ ডেস্ক ::: কারাবন্দি খালেদা জিয়ার জামিন নিয়ে বিএনপির একজন সংসদ সদস্যের অনুরোধে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে কথা বলেছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। পরে এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর মনোভাব সাংবাদিকদের সঙ্গে তুলে ধরেন সেতুমন্ত্রী। বুধবার দুপুরে সচিবালয়ে নিজ দফতরে সমসাময়িক বিষয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে ওবায়দুল কাদের এসব কথা বলেন।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘বিএনপির একজন এমপি (হারুন অর রশিদ) আমার সঙ্গে দেখা করে খালেদা জিয়ার জামিনের বিষয়ে কথা বলেছেন। তিনি তাদের দলের অভিপ্রায়ের কথা বলেছেন যে, খালেদা জিয়াকে জামিন দিলে তিনি (খালেদা জিয়া) বিদেশে চিকিৎসার জন্য যাবেন।’ আমি প্রধানমন্ত্রীকে বিষয়টি জানিয়েছি। তিনি বলেছেন, এটা আদালতের বিষয়। আদালত জামিন না দিলে আমি কীভাবে করব?- যোগ করেন ওবায়দুল কাদের।
কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে তিনি জামিন পাবেন কিনা সেটা আদালতের বিষয়। সরকার আদালতকে কীভাবে বলবে যে জামিন দিয়ে দেবেন? এটা কি বলা উচিত? তাহলে তো বিচার ব্যবস্থার প্রতি সরকারের হস্তক্ষেপ হবে। ‘উনি যদি জামিন পান এবং চিকিৎসকরা যদি মনে করেন তার বিদেশে গিয়ে চিকিৎসা করা দরকার, সেটা তারা বলতে পারেন। সে ধরনের কোনো রিপোর্ট পেলে, চিকিৎসকদের পরামর্শ থাকলে জানাতে পারেন।
আদালতে জামিন দেয়ার বিষয়ে সরকার বলতে পারে না। এটি আদালতের উপর ছেড়ে দিন।’ সরকার খালেদাকে বিদেশে যাওয়ার বিষয়ে কোনো সহযোগিতা করবে কিনা জানতে চাইলে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘বেগম জিয়ার সঙ্গে আমাদের তো আমাদের কোনো শত্রুতা নেই, তিনি যদি জামিন পান, জামিন পেলে চিকিৎসকরা বিদেশ যাওয়ার ব্যাপারে রিপোর্ট দেন তখন দেখা যাবে।’ জামিনের বাইরে বিকল্প ব্যবস্থায় খালেদা জিয়ার বিদেশে যাওয়ার কোনো আলোচনা হয়েছে কিনা- এমন প্রশ্নে ওবায়দুল কাদের বলেন, এমপি হারুন শুধু জামিনের কথা বলেছেন, নেত্রীকে জানাতে বলেছেন।
তিনি তো আন্তরিকভাবেই বলেছেন, বেগম জিয়ারও হয়তো ইচ্ছা থাকতে পারে। বেগম জিয়ার সঙ্গে আলোচনা করেই আমার সঙ্গে আলোচনা করেছেন। ‘আমি প্রধানমন্ত্রীকে জানিয়েছি, প্রধানমন্ত্রী আদালতের বিষয় বলেছেন। আদালতের জামিন বিষয়টা মূল। বলেছেন, আদালতে জামিন না হলে কীভাবে দেখব?’ বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব হারুনুর রশীদ নিজেও এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেছেন বলে জানান কাদের।
অপর এক প্রশ্নের জবাবে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘তারা জামিন আবেদন করলে পক্ষ-বিপক্ষ আলোচনা হবে। সে অবস্থায় এলে জামিন তারা কেন চান, জামিন চাওয়ার মতো মামলায় সেই সুবিধা আছে কিনা, সেটি দেখতে হবে। এটা আদালতের বিষয়। যিনি বিচারপতির আসনে বসবেন, তিনি সিদ্ধান্ত দেবেন। সরকারের এখানে কিছু করার নেই। খালেদা জিয়ার সঙ্গে আমাদের কোনো শত্রুতা নেই।’
এ সময় তিনি আন্দোলন করে খালেদা জিয়াকে মুক্ত করতে বিএনপির প্রতি আহ্বান জানান। তিনি বলেন, ‘বিএনপি ভেতরে ভেতরে খালেদার মুক্তির জন্য সরকারের সহযোগিতা চাইছে।
তবে বাইরে দলের নেতারা আন্দোলন করে তাকে মুক্ত করার কথা বলছেন। আমি মনে করি, তারা আন্দোলন করুক। তারা আন্দোলন করে বিস্ফোরণ সৃষ্টি করে যদি তাকে মুক্ত করতে পারে, করুক। আন্দোলনের কথা বলেও তাদের কোনো ছোট ঢেউও দেখলাম না। তারা এত বড় দল, আন্দোলন করে তারা সরকার হটাক। তা হলে তো খালেদা জিয়া মুক্ত হবেন, তাদের সরকারে আসার খায়েশ পূরণ হবে।’ এর আগে বুধবার সকালে সচিবালয়ে সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের সঙ্গে নিজ নির্বাচনী এলাকার উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড নিয়ে কথা বলেন হারুন অর রশীদ। এ সময় তিনি খালেদা জিয়ার জামিনের বিষয়েও কথা বলেন।
পরে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, কারাবন্দি বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার জামিন নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে আজ সন্ধ্যায় কথা বলবেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। খালেদা জিয়ার জামিন নিয়ে ওবায়দুল কাদের কী বলেছেন জানতে চাইলে হারুন অর রশিদ বলেন, ‘আমরা খালেদা জিয়ার জামিনের বিষয়ে কথা বলেছি। তিনি আজ সন্ধ্যায় এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলবেন বলে জানিয়েছেন।’
আদালতের রায়ে খালেদা জিয়া কারাবন্দি, এমতাবস্থায় তার জামিন নিয়ে সরকার ও সরকার প্রধানের সঙ্গে কেন কথা বলছেন-এমন প্রশ্নের জবাবে হারুন বলেন, ‘বাংলাদেশে বিচারব্যবস্থার কথা আপনারা সবাই জানেন। রাজনীতিকদের নামে অনেক মামলা হয়, সাজাও হয়। আবার তা সরকারের মধ্যস্থতায় ফয়সালাও হয়। অনেক ছোট ছোট নেতা এভাবে জামিন নিয়ে বিদেশে চলেন গেছেন। খালেদা জিয়া তো তিনবারের প্রধানমন্ত্রী, উনি কেন জামিন পাবেন না।’
সরকারপ্রধানের সঙ্গে যোগাযোগ রাজনৈতিক সমঝোতার ইঙ্গিত বহন করে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘না, এটি সমঝোতা হতে যাবে কেন? যে নির্বাচনের মাধ্যমে সরকার ক্ষমতায় এসেছে সেটি তো প্রশ্নবিদ্ধ। ৩০ তারিখের ভোট ২৯ তারিখে হয়ে গেছে। প্রধানমন্ত্রী নিজেও তো কিছুদিন আগে লন্ডনে তার চোখের অপারেশন করিয়েছেন, যা দেশে সম্ভব ছিল। কাজেই সামর্থ্য থাকলে খালেদা জিয়ার চিকিৎসা কেন বিদেশে হবে না।’
জামিন পেলে খালেদা জিয়ার সুচিকিৎসার ব্যবস্থা করা হবে জানিয়ে বিএনপির এই যুগ্ম মহাসচিব বলেন, ‘আমি আবারও আপনাদের বলছি- একজন সন্তান হিসেবে অসুস্থ বাবা-মায়ের চিকিৎসার বিষয়ে যা যা করা দরকার সেই দায়িত্ববোধ থেকে আমি খালেদা জিয়ার জন্য জামিন চাইতে এসেছি। তার চিকিৎসা প্রয়োজন। জামিন পেলে তার সুচিকিৎসা করানো হবে।’
খালেদা জিয়ার জামিন নিয়ে বিদেশে পাঠানোর মাধ্যমে তাকে কি বিএনপির রাজনীতি থেকে মাইনাস করা হচ্ছে কিনা —এমন প্রশ্নের জবাবে এমপি হারুন বলেন, ‘এটি ঠিক নয়। তার ৭৬ বছর বয়স। তিনি নানা রোগে আক্রান্ত। তার জরুরি চিকিৎসা প্রয়োজন। সে কারণে আমরা বলেছি তাকে জামিন দেন এবং তার চিকিৎসা করাবো। এর মধ্যে কোনো রাজনীতি নেই।’ খালেদা জিয়াকে কি দেশে নাকি বিদেশে চিকিৎসা করাবেন—এ প্রশ্নের জবাবে হারুন অর রশিদ বলেন, ‘আগে তার মুক্তি হোক। তারপর দেখা যাবে চিকিৎসা দেশে হবে নাকি বিদেশে।’
এর আগেও একবার তার প্যারোলে মুক্তির বিষয়ে আলোচনা হয়েছিল সে বিষয়ে জানতে চাইলে হারুন অর রশীদ বলেন, ‘প্যারোল নিয়ে আগে কোনো আলোচনা হয়নি। সরকারের পক্ষ থেকেও প্যারোলের কোনো প্রস্তাব দেয়া হয়নি। আর পরিবার ও দলের পক্ষ থেকেও তার প্যারোলে মুক্তির বিষয়ে কোনো আবেদন করা হয়নি। এই প্যারোলে মুক্তির বিষয়টি মিডিয়া থেকে এসেছে। এটি মিডিয়ার সৃষ্টি।’ মঙ্গলবার বিকাল ৪টায় বিএসএমএমইউতে কারাবন্দি বিএনপি চেয়ারপারসনের সঙ্গে দেখা করেন হারুনসহ দলটির তিন সংসদ সদস্য। তার সঙ্গে বিএসএমএমইউতে যাওয়া অপর দুই সংসদ সদস্য হলেন- উকিল আবদুস সাত্তার ও মো. আমিনুল ইসলাম।
সেখান থেকে বেরিয়ে এসে হারুন অর রশীদ বলেন, খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা খুব বেদনাদায়ক, হাত ফুলে আছে, ব্যথা। খাওয়াটাও নিজের হাতে খেতে পারেন না। সঙ্গে যিনি আছেন, তিনি খাইয়ে দেন। তার পোশাকও আরেকজনকে পরিয়ে দিতে হয়। এ অবস্থায় তাকে জেলে বন্দি রাখাটা অত্যন্ত অমানবিক। জামিনে মুক্তি না দিয়ে সরকার খালেদা জিয়ার প্রতি জুলুম করছে বলেও অভিযোগ করেন হারুন অর রশীদ। তিনি জানান, জামিনে মুক্তি পেলে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে যাবেন তিনি।
কান্নাজড়িত কণ্ঠে হারুন অর রশীদ বলেন, খালেদা জিয়া চরম জুলুমের শিকার। তিনি কী কষ্টে আছেন তা ভাষায় প্রকাশ করতে পারব না। এই জুলুম থেকে যেন আল্লাহপাক তাকে মুক্ত করে এটাই আমাদের প্রত্যাশা। হারুন অর রশিদ বলেন, দেশবাসীর কাছে উনি দোয়া চেয়েছেন। বিদেশে চিকিৎসা দরকার। উন্নত বিশেষায়িত হাসপাতালে চিকিৎসা দরকার। সুযোগ দিলে তো অবশ্যই বিদেশে যাবেন। আজকে জামিন পেলে কালই বিদেশে যাবেন।
প্যারোলের আবেদন করা হবে কিনা এমন প্রশ্নে হারুন বলেন, প্যারোলের বিষয় আসছে কেন? উনি তো জামিন পাওয়ারই যোগ্য। সরকারের তরফ থেকে প্যারোলের কোনো প্রস্তাবনা আছে কিনা প্রশ্ন করা হলে হারুন অর রশীদ বলেন, ‘প্যারোলের বিষয়ে কোনো প্রস্তাবনা নেই। এ বিষয়টি আসবে কেন? তিনি তো জামিন পাওয়ার যোগ্য।’
ওবায়দুল কাদেরকে বিদেশে পাঠিয়ে চিকিৎসা দেয়া হয়েছে, এমন উদাহরণ টেনে বিএনপির এ এমপি বলেন, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরকে চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুর নিয়ে যাওয়া হয়েছে। তিন বারের সাবেক প্রধানমন্ত্রীকে কেন এই চিকিৎসার সুযোগ থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে? এটি সারা দেশের মানুষ জানতে চায়। দুর্নীতির মামলায় সাজাপ্রাপ্ত বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি থেকে কারাবন্দি।
শারীরিক অসুস্থতার কারণে ১ এপ্রিল থেকে কারা হেফাজতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে তিনি চিকিৎসাধীন।